,

‘শ্রমিক দিবস’ কি জানে নাহ বিগঞ্জের ইটভাটা শ্রমিকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ পহেলা মে, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় এক ঐতিহাসিক দিন। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই মহান মে দিবস পালিত হয়। মে দিবস পালিত হয় বাংলাদেশেও। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে প্রথমবারের মত মে দিবস পালিত হয় এ দেশে। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই পহেলা মে সরকারি ছুটি থাকে। নানা স্লোগান আর শ্রম অধিকার আর নানান কথায় উদযাপিত হচ্ছে মহান মে দিবস। হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে প্রায় শতাধিক ইটভাটা। এর মধ্যে বাাহুবল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ফজরের আজানের আগেই ঘুম থেকে উঠে ইটভাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাজারো শ্রমিক। কাঁচা ইট টানে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত।  গোড়ার টপ শ্রমিকদের হাতগুলো থ্যাকথ্যাকে সাদা সাদা হয়ে আছে। সেই দগদগে ঘা কখনোই শুকোয় না। ঝাল মরিচে রান্না তরকারি দিয়ে ভাত খেতে গেলেই অন্তরাত্মা পর্যন্ত জ্বলে উঠে। চোখের পানি গাল বেয়ে ঠোঁটের কোনা দিয়ে মুখে চলে যায়। ওভাবেই দিন শুরু আর দিন শেষ! হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে সহ¯্রাধিক শ্রমিক এবং সেই সব শ্রমিকের কত শতাধিক বয়সের শিশু শ্রমিক রয়েছে, তার কোনো খতিয়ান রাষ্ট্রের কোনো দফতরে নেই। ঠিক কতজন শ্রমিক এই জেলায় শ্রম শোষণের শিকার তারও কোনো হিসাব সরকারের হাতে বা তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে নেই। এদের কেউ তার কর্ম জীবনে আট ঘণ্টা বলে যে একটা শব্দ আছে সেটাই জানেননি, বোঝেননি। তাদের জানতে বা বুঝতে দেওয়াও হয়নি। শ্রম শোষণ বা শ্রম চুরির মতো একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় নিয়ে এই রাষ্ট্র, সরকার, বিরোধী দল, ছোট বড় দল এবং বুদ্ধিজীবীদের কোনো চিন্তা নেই। এ নিয়ে সংবিধান সংশোধনও হয় না, সংসদে কোনো বিলও পাশ হয়না। অথচ জেলার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমিকের সিংহভাগই শ্রম শোষণের শিকার। সেই অজো পাড়াগাঁ থেকে শুরু করে এই তিলোত্তমা পৌরশহরেও বেশুমার সেই শ্রম শোষণ আর শ্রমচুরি চলছে। ইটভাটায় শ্রমিকদের ষোল ঘণ্টা কাজ করলেও সকাল-বিকাল মালিকদের লাথি-গুতো খেতে হয়। জিঞ্জিল দিয়ে বেধে কাজ করানো হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রমিকরা এসে কাজে যোগ দেয় ইটভাটায়। জেলায় প্রায় শতাধিক ইটভাটায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। কথা হয় মেঘনা ব্রিকসের ম্যানেজার রাসেল মিয়ার সাথে, সে বলে ছুটি কি জিনিস আমরা জানি না। মে দিবস মানে কি তাও জানি না। জানি শুধু ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারলেই এই ইটভাটার মালিকরা বেতন তুলে দেয়। শরীয়তপুর থেকে আসা আগুনমিস্ত্রী আবুল হাশিম জানান, এত দূর থেকে আগুনের লোক নিয়ে এসে এখানে কাজ করাই, নেই কোনো ছুটি। ছয়মাসের জন্য আসলে আমাদের ঈদ পর্যন্ত এখানেই কাজ করতে হয় হবিগঞ্জের ইটভাটায় নিয়োজিত হাজার হাজার  শ্রমিকদের। যাদের মধ্য একজন মো. আবুল মিয়া। মে দিবস সম্পর্কে ইটভাটার এ শ্রমিক বলেন, ‘মে দিবস বা শ্রম দিবসের কথা শুনেছি কিন্তু এটা কি তা জানিনা। আর এই দিনে আমরা কখনো কোনদিন কাজ বন্ধ রাখি নাই। কাজ না করলে তো পেটে খাবার মিলবে না। তাই নিয়মিত কাজ করে যাই, কখনো এ দিনে ছুটির চিন্তাও করি না।’আরেক জন ইটভাটার শ্রমিক হেলাল মিয়া। বর্ষার সিজন আসছে, তাই ভাটায় কাজ নেই। তবে ইট পোড়া হচ্ছে, ইট বের হলে কাজ হবে। শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানে না এই শ্রমিকও। কখনো শুনেনি দিনটি সম্পর্কে। এই দিনে যে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, অনেক শ্রমিক আত্মহুতি দিয়েছে সেটাও জানতো না ইটভাটার এ শ্রমিক। হেলাল মিয়া বলেন, ‘আসলে এসব দিনের কথা ভেবে যদি কাজ বন্ধ করে দেই। তবে আমাদেরই একদিনের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এসব দিবস গুলো নিয়ে আমরা কখনো ভাবি না। আমরা বরং এটা ভাবি যে একবেলা কাজ করতে পারলে একবেলা খেতে পারবো।’ হবিগঞ্জ ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মহিবুর রহমান জানান, আমরা শ্রমিকদের স্বার্থ চিন্তা করে একটি ওই সংগঠনটি রেজিস্ট্রেশন করেছি। মালিকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়। চাকুরী থেকে বিদায় করে দেওয়া হয় শ্রমিকদের। হবিগঞ্জ ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মাসুম বলেন, আমরা ছুটি রেজিষ্ট্রারের বিষয়ে মালিকদের সাথে কথা বলেছিলাম। কেন আমরা সংগঠন করলাম সে জন্য উল্টো তারা সংগঠনের অনেক শ্রমিককে চাকুরি থেকে বিনা নোটিশে, বিনা বেতনে চাকুরিচ্যুৎ করেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর